আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত , Ahle Sunnat Wal Jamaat

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের পরিচয়ঃ যারা হুজুর( সঃ) সাহাবায়ে কিরামের মত পথে প্রতিষ্ঠিত এরাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ( ahle sunnat wal jamaat )। যদিও ভ্রান্ত মতবাদের গোষ্ঠীরাও নিজেদেরকে আহলুস সুন্নাহ দাবী করে।

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে,এক সময় রাসূল( সঃ) আমাদেরকে বুঝাবার জন্য একটি সরল রেখা টানলেন এবং বললেন এটাই আল্লাহর রাস্তা।অতঃপর তিনি উক্ত সরল রেখাটির এপাশে ওপাশে কতগুলো রেখা টানলেন এবং বললেন সকল হল ভ্রান্ত দলসমূহের রাস্তা।এ সকল রাস্তার প্রত্যেক রাস্তায় শয়তান অবস্হান করছে এবং মানুষদেরকে সকল ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকছে।

 

হাদীসের ব্যাখ্যায় মিরকাত শরীফে লিখিত আছে-উক্ত হাদীসে কথার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যে,আল্লাহর রাস্তা সিরাতে মুস্তাকীম বা মধ্যমপন্হা।এতে চরম আদর্শবাদ শিথিল আদর্শবাদের অবকাশ নেই।

 

বরং এতে তাওহীদ, ইস্তকামাত,সরলপন্হা মধ্যমপন্হা এবং ইফরাত তাফরীতের মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধানের ব্যবস্হা রয়েছে। পক্ষান্তরে ভ্রান্ত দলসমূহের রাস্তায় চরম আদর্শবাদ নতুবা শিথিলতা বিদ্যমান।

 

ইফরাত (চরমআদর্শবাদ) তাফরীত শিথিলতা উভয়ই ভ্রান্ত পথ এবং উভয়ই সিরাতুল মুস্তাকীমের বিপরীত। তাফরীতপন্হীরা দ্বীনকে কাটছাট করতে চেষ্টা করে।পূর্ব সময়ের মুরজিয়া,বাতেনিয়া,এবাহিয়া,দ্বীনে এলাহী প্রভৃতি তাফরীতপন্হী মতবাদ।

 

ইফরাতপন্হীরা ইফরাতী দৃষ্টিভঙ্গিতে ইসলামের এমন ব্যখ্যা পেশ করে,যাতে অধিকাংশ মুসলমান কাফির অথবা মুশরিকরূপে চিত্রিত হয়ে পড়ে।তারা ইসলামের খুঁটিনাটি ব্যাপারে প্রতি এমন গুরুত্ব আরোপ করে থাকে যার পরিনাম কওম মিল্লাতের জন্য মারাত্মকরূপ ধারন করে।

 

আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত (Ahle Sunnat Wal Jamaat) এর  আকিদা সমূহঃ

 

.আল্লাহ এক,তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন,তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকে কেউ জন্ম দেয়নি।তাঁর কোন স্ত্রী নেই।তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।

 

.তাঁর সমস্ত গুণাবলি চিরস্থায়ী। তা কখন বিনষ্ট হবেনা।মাখলুকতে গুণ হতে তিনি মুক্ত।পৃথিবীতে যা হচ্ছে বা হবে তিনি পূর্ব থেকে জ্ঞাত আছেন।

 

.আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে এমন কোন হুকুম করেন না যা তাঁর দ্বারা সম্ভব হয়না।খোদা তায়ালার উপর কোন বস্তু বা বিষয়ে জিম্মা নেই।তিনি যা করেন কেবল মেহেরবানী করে থাকেন।মানব জাতিকে সঠিক পথের দিশা দিবার জন্য নবী রাসূল পাঠিয়েছেন। তাদেরকে অলৌকিক ক্ষমতা দান করেছেন।আরবিতে মুজিযা বলে।

 

.নবী রাসূলের প্রকৃত সংখ্যা মহান আল্লাহ ভাল জানেন।তাদের প্রত্যেকের উপর ঈমান আনতে হবে।

 

.নবী রাসূলদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ( সঃ)।তার পরে আর কোন নবী আসবেন না।

 

.হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) মানুষ জ্বীনের নবী।মোট কথা হল তিনি গোটা সৃষ্টির রহমত।

 

.মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে জাগ্রত অবস্হায় মিরাজ করান।আল্লাহর সাথে স্ব শরীরের সাক্ষাৎ করেন।মিরাজ সত্য।

 

.আল্লাহ তায়ালা কতিপয় জীবকে নূর দ্বারা করে আমাদের নজর হতে আড়ালে রেখেছেন এদেরকে ফেরেশতা বলে।

 

.যিনি ফরজ পালনের পাশাপাশি ওয়াজিব, সুন্নাত,নফল বেশি বেশি পালন করেন তিনি আল্লাহ ওলীতে পরিনত হয়।তার থেকে যদি অলৌকিক কোন কিছু প্রকাশ পায় তাকে কারামত বলে।এটা বিশ্বাস করতে হবে।

 

১০.ওলী যতই বড় হোক না কেন,তাঁরা কখনো নবীদের দরজা পাবেনা।

 

১১.আল্লাহর যতই প্রিয় বান্দা হোক না কেন,জীবন থাকতে শরীয়তের হুকুম মত চলা তার উপর ফরজ। নামায,রোযা বা অন্য কোন ইবাদত তার জন্য মাফ নয়।কোন গুণাহের কাজ করা তার জন্য শোভনীয় নয়।

 

১২.যে ব্যক্তি শরীয়তের খেলাফ চলে সে খোদার প্রিয় হতে পারেনা।যদি তার দ্বারা কোন অলৌকিক কিছু প্রকাশ পায় তাকে যাদু বলে।এটা বিশ্বাস করা যাবেনা।

 

১৩.আল্লাহর অলী গণ জাগ্রত বা ঘুমন্ত অবস্হায় অনেক বিষয় অবগত হন।যাকে আরবিতে ইলহাম বলে।যদি তা শরীয়তের নিয়মানুযী হয় তবে তা গ্রহণ যোগ্য হবে, নচেৎ হবেনা।

 

১৪.সকল আসমানী কিতাবে ইমান আনতে হবে।তবে একমাত্র কুরআন অনুসরণ করতে হবে।কেননা,অন্য সব কিতাব বিকৃত হয়েছে।কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালার

 

১৫.আমাদের নবীকে যারা দেখেছেন তারা সাহাবী। সাহাবায়ে কিরাম সত্যের মাপকাঠি।রাসূল (সঃ) বলেছেন-আমার সাহাবীগণ আকাশের তারকারাজি সমতুল্য। সাহাবায়ে কিরামদের সমালোচনা করা যাবেনা।

 

১৬.কোন অলী সামান্য দরজার সাহাবীর সমকক্ষ হতে পারবেননা।

 

১৭.হযরত নবী করিম( সঃ) এর বিবিগণ সন্তান-সন্ততি সকলেই শ্রদ্ধার পাত্র।সন্তানদের মধ্যে হযরত ফাতিমাতুজ্জোহরা( রাঃ) এবং বিবিগণের মধ্যে হযরত খাদিজা আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) এর দরজা সর্বাপেক্ষা বেশি।

 

১৮.যখনই ঈমান দূরস্ত হবে তখনই আল্লাহ তাঁর রাসূলের কথা সত্য বলে জানতে হবে এগুলোর সমস্তই বিশ্বাস করতে হবে।আল্লাহ তাঁর রাসূলের কথায় সন্দেহ করা,মিথ্যা বা তার দোষ ত্রুটি বের করা তা নিয়ে উপহাস করলে ঈমান ধ্বংস হয়ে যাবে।

 

১৯.কুরআন হাদীসের স্পষ্ট অর্থ না মেনে অর্থ বদলিয়ে স্বীয় মতলব সিদ্ধ করার ইচ্ছা কুফরি কাজ।

 

২০.গুনাহ করা হালাল জানলে ঈমান চলে যাবে।

 

২১.গুনাহ যত বড় হোক না কেন তাতে লিপ্ত হলে ঈমান যাবেনা বরং ঈমান দূর্বল হবে।

 

২২.আল্লাহ হতে নির্ভয় নিরাশ  হওয়া কুফুরী কাজ।

 

২৩.আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কেউ গায়েব জানেন না,তবে নবীগণ ওহী দ্বারা অলী গণ কাশফ ইলহাম দ্বারা,সাধারণ লোক লক্ষণ দ্বারা কোন কোন বিষয় জানতে পারেন।

 

২৪.মৃত ব্যক্তি ইবাদতে বদনী মালীর সওয়াব পেয়ে থাকেন।

 

২৫.আল্লাহ তাঁর রাসূল কিয়ামতের যে সব আলামত বর্ণনা করেছেন তা সত্য। এবং তা নিশ্চয় হবে।ইমাম মাহদী (আঃপ্রকাশ পাবেন।খুব সুবিচারের সাথে বাদশাহী করবেন।দাজ্জাল বের হবে এবং দুনিয়াতে বহু ফাসাদ সৃষ্টি করবে।ঈসা (আঃ) তাকে মেরে ফেলবেন।ইয়াজুজ-মাজুজ বের হবে।তারা সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরবে।আল্লাহ ইয়াজুজ-মাজুজকে ধ্বংস করে দিবেন।পরে আশ্চর্য রকমের এক জন্তু বের হবে,যা মানুষের সাথে কথা বলবে।পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হবে।কুরআন শরীফ উঠে যাবে,অল্প দিনের মধ্যে সমস্ত মুসলমান মরে যাবে।ইহা ছাড়া আরো অনেক কিছু ঘটবে।

 

২৬.কিয়ামতের সকল আলামত পূর্ণ হলে ইসরাফিল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে শিঙ্গায় ফুৎকার দিবেন।

 

২৭.যখন আল্লাহ তায়ালার মঞ্জুর হবে পুনরায় পৃথিবী সৃষ্টি করা হবে।মৃত ব্যক্তিগণ জীবিত হবে এবং কিয়ামতের মাঠে সমস্ত ব্যক্তি একত্রি হবে।ঐ স্হানের কষ্ট দেখে সকলেই সুপারিশের জন্য স্ব স্ব পয়গম্বরের নিকট যাবেন।শেষ পর্যন্ত আমাদের পয়গম্বর( সঃ) আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবেন।মীযান রাখা হবে,নেকী-বদীর ওজন হিসাব হবে।কেউ কেউ বিনা হিসাবে বেহেশতে যাবে।নেক লোকের আমলনামা ডান হাতে এবং বদ লোকের আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে।মহানবী নিজ উম্মতকে হাউজে কাওসারের পানি পান করাবেন,যার পানি দুধ অপেক্ষা সাদা এবং মধু অপেক্ষা মিঠা।পুলসিরাত পার হতে হবে।নেক লোকেরা তা পার হয়ে বেহেশতে যাবেন।বদ লোকেরা কেটে জাহান্নামে পরে যাবে।

 

২৮.দোযখ সৃষ্টি হয়েছে,তার মধ্যে,বিচ্ছু এবং নানা প্রকারের শাস্তি রয়েছে।

 

২৯.বেহেশত সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে নানা রকমের আরাম শান্তির বস্তু সৃষ্টি হয়েছে। বেহেশতবাসীদের কোন ভয় দুঃখ থাকবে না।

 

৩০.আল্লাহ ইচ্ছা করলে ছোট গুনাহের জন্য শাস্তি দিবেন।আবার বড় গুনাহের জন্য মাফ করে দিবেন।

 

৩১.বেহেশতের মধ্যে যত নিয়ামত হবে তম্মধ্যে আল্লাহ তায়ালার দিদার সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নিয়ামত।

 

৩২.জীবনে যতই ভাল মন্দ কাজ করুক না কেন যার অবস্হায় মৃত্যু হবে তদনুযায়ী বদলা প্রাপ্ত হবে।জীবনের মধ্যে মানব যখনই তওবা করবে মুসলমান হবে,আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করবেন।কিন্তু মৃত্যুর ফেরেশতা দেখে তাওবা করলে আল্লাহ তা কবুল করবেন না।